বাংলাদেশে মসুর সবচেয়ে
জনপ্রিয় ডাল ফসল। জমির পরিমাণ ও উৎপাদনের ভিত্তিতে মসুর ডাল বাংলাদেশে ২য় স্থানে
অবস্থান করলেও ব্যবহার ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে ১ম স্থান লাভ করে আছে। বাংলাদেশে ডাল
ফসলের এলাকা ও উৎপাদনের দিক থেকে মসুরের স্থান দ্বিতীয়। বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত এসব
জাত কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক আবাদ হলে দেশে ডালের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।
মসুর একদিকে একক ফসল এবং অন্যদিকে সাথী ও আন্তঃফসল হিসেবে বাংলাদেশের কৃষকের মাঝে
ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মসুর চাষে জমির ঊর্বরতাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
মুসুরের আধুনিক জাত সমুহঃ
বারি মসুর-১ : গাছের আকৃতি মধ্যম এবং উপরিভাগ লতানো হয় না ও
ডগা বেশ সতেজ। গাছের পাতা গাঢ় সবুজ। কান্ড হালকা সবুজ। ফুলের রং সাদা। হাজার বীজের
ওজন ১৫-১৬ গ্রাম। ডাল রান্না হওয়ার সময়কাল ১০-১২ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২৬-২৮%। এ
জাতের জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৭০০-১৮০০ কেজি।
বারি মসুর-২: গাছের
আকার মধ্যম ও গাছের উপরিভাগ সামান্য লতানো হয়। পাতায় সরু আকর্ষী থাকে। গাছের পাতা
গাঢ় সবুজ। কা- হালকা সবুজ ও ফুল সাদা। হাজার বীজের ওজন ১২-১৩ গ্রাম। রান্না হওয়ার
সময়কাল ১৪-১৬ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২৭-২৯%। জাতটির জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন।
হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫০০-১৭০০ কেজি।
বারি মসুর-৩: বারিমসুর-৩ জাতটি একটি সংকর জাত। কান্ডে
পিগমেন্টেশন বিদ্যমান। পাতার রং সবুজ। বীজের রং ধূসর এবং বীজে ছোট ছোট কালচে দাগ
আছে। বীজের আকার স্থানীয় জাত অপেক্ষা বড়। হাজার বীজের ওজন ২২-২৫ গ্রাম। ডাল রান্না
হওয়ার সময়কাল ১০-১২ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২৪-২৬%। জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন। ফলন
হেক্টরপ্রতি ১৫০০-১৭০০ কেজি।
বারি মসুর-৪: গাছের রং
হালকা সবুজ। পত্রফলক আকারে বড় এবং পাতার শীর্ষে আকর্ষী আছে। ফুলের রং বেগুনি।
বীজের আকার স্থানীয় জাত হতে বড় ও চেপ্টা ধরনের। বীজের রং লালচে বাদামি। হাজার
বীজের ওজন ২০-২১ গ্রাম। এ জাতটি মরিচা ও স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ সহনশীল। ডাল
রান্না হওয়ার সময়কাল ১১-১৩ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২৪-২৬%। ফলন হেক্টরপ্রতি
১৬০০-১৭০০ কেজি।
বারি মসুর-৫: পাতা ও
গাছের রং সবুজ, পাতার অগ্রভাগে ছোট আকারের টেন্ড্রিল থাকে। গাছের ধরন ঝোপালো,
গাছের উচ্চতা ৩৮ সেমি এবং ফুলের রং হালকা বেগুনী, বীজ স্থানীয় জাত হতে বড় ও চেপ্টা
ধরনের। বীজের রং লালচে বাদামী পরিপক্কতার সময় ১১০-১১৫ দিন। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন
২১০০-২২০০ কেজি। এ জাতটি মরিচা ও স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ সহনশীল।
বারি মসুর-৬: পাতার রং
গাঢ় সবুজ,পাতার অগ্রভাগে টেন্ড্রিল থাকে না। গাছের ধরন ঝোপালো,উচ্চতা ৩৫-৪০ সেমি।
ফুলের রং বেগুনী, বীজ আকারে স্থানীয় জাত হতে অনেক বড় ও চেপ্টা ধরনের। বীজের রং গাঢ়
বাদামী, হেক্টরপ্রতি ফলন ২২০০-২৩০০ কেজি। পরিপক্কতার সময় ১১০-১১৫ দিন। এ জাতটি
মরিচা ও স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ সহনশীল।
বারি মসুর-৭: জাতটি বাংলাদেশের সকল এলাকায় চাষাবাদের উপযোগী
বিশেষ করে মসুর উৎপাদন এলাকা যেমন-পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া,ফরিদপুর, রাজশাহী,
মাগুরা,ঝিনাইদহ এবং মাদারীপুরে জাতটি অধিক উৎপাদনক্ষম। সব ধরনের মাটিতেই জাতটি চাষ
করা যেতে পারে। তবে সুনিষ্কাশিত বেলে দোঁআশ মাটিতে ভাল জন্মে। জমিতে পানি জমে না
থাকলে কাঁদা মাটিতেও রিলে ফসল হিসাবে এর চাষ করা যেতে পারে। গাছের উচ্চতা ৩২-৩৮
সেমি। প্রতি গাছে পড সংখ্যা ৫৫-৬০টি। বীজের রং লালচে বাদামী ও হালকা কালো
ফোঁটাযুক্ত। ১০০০ বীজের ওজন ২২-২৩ গ্রাম। জীবনকাল ১১০-১১৫দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি
১৮০০-২৩০০ কেজি।
বারি মসুর-৮: এ জাতটির
পাতা ও কা- হালকা সবুজ এবং পাতায় হালকা ট্রেন্ড্রিলযুক্ত। গাছ ঝোপালো আকৃতির এবং
ফুলের রং বেগুনী।গাছের গোড়ায় খয়েরী পিগমেন্ট বিদ্যমান। বীজ গোলাকার, ধূসর ও হালকা
কালো ফোটা যুক্ত। ষ্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট (পাতা ঝলসানো) রোগ সহনশীল। আমিষের পরিমাণ
২৪.০ - ২৪.৯ %। জিংক এর পরিমাণ ৬০ পিপিএম। আয়রন এর পরিমাণ ৮০ পিপিএম। ১০০০ টি
বীজের ওজন ১৯-২২ গ্রাম। জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। ফলন হেক্টর প্রতি ২১০০-২২০০ কেজি।
নাবিতে বপন যোগ্য (নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত)
বারি মসুর-৯: এ জাতটি
বিশেষভাবে স্বল্পকালীন এবং উচ্চ মাত্রায় জিংক ও আয়রন সমৃদ্ধ। জাতটি রবি মৌসুমে ডাল ফসল হিসেবে দেশের সর্বত্র
চাষাবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। পাতা ও কা- হালকা সবুজ রংয়ের, ফুল নীলাভ সাদা,
বীজ হালকা ধুসর বর্ণের এবং জীবনকাল ৮৫-৯০ দিন। এ জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল,
১০০ বীজের ওজন ২.২২-২.৯৬ গ্রাম এবং গড় ফলন- ১.১৯ - ১.৫২ টন/হেক্টর।
উত্তর সমূহ